মানুষ জীবতাত্ত্বিকভাবে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। এই ধাপগুলো হচ্ছে শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও প্রৌঢ়ত্ব। প্রতিটি ধাপে শারীরিক পরিবর্তনকালে প্রতিটি মানুষ একটি সুনির্দিষ্ট আচরণের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ ধরনের আচরণ ভৌত এবং রাসায়নিক উদ্দীপকের প্রত্যক্ষ ক্রিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া (Reflex action), সহজাত প্রতিক্রিয়া দ্বারা প্রভাবিত বা উদ্দীপিত হয়। অতঃপর জীবন যখন এগিয়ে চলে তখন আচরণের ধরনে জটিলতা দেখা দেয় এবং প্রকৃত শিক্ষা দ্বারা এ সকল জটিলতা মানুষ তার স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা, যুক্তি ও অভীষ্ট সাধনের ক্ষমতা দ্বারা সমাধান করতে সক্ষম হয়।
মানসিক আচরণের প্রকারভেদ : মানব প্রকৃতি বিশদভাবে জানতে গেলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয় এজন্য যে ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এক বিস্ময়কর বৈসাদৃশ্য পরিদৃশ্যমান। যেমন কেউ অতিমাত্রায় ফুর্তিবাজ আবার কেউ বিষাদগ্রস্ত, কেউ কৌতুকপ্রিয়, কেউ রাশভারী, কেউ প্রাণবন্ত, কেউ গম্ভীর, কেউ বুদ্ধিমান, কেউ বোকা, কেউ সতর্ক, কেউ দুঃসাহসী, কেউ অমায়িক, স্নেহপ্রবণ, কোমল, কেউ অমার্জিত রূঢ়, কঠোর- এভাবে দু'টি পরস্পরবিরোধী আচরণের অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় এবং তা খুবই বৈচিত্র্যময়। কোনো ব্যক্তির মধ্যে যখন এসব বৈশিষ্ট্য দেখা দেয় তখন আমরা তাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নামে অভিহিত করি। আর এই ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের দ্বারা একজন ব্যক্তিকে আরেক ব্যক্তি থেকে আলাদা করা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের এই বিভিন্নতার কারণ কী তা জানা প্রয়োজন। কেননা একই পরিবারের একই পরিবেশে সব সন্তান একই রকমের হয় না। তাদের আচরণের মধ্যে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ এজন্য শারীরিক গঠন কাঠামোকে দায়ী করেন। আবার কেউ বংশগতি কিংবা পরিবেশগত অবস্থাকে এর কারণ বলে মনে করেন।
মানসিক অস্থিরতা দূরীকরণের উপায় : স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে বোঝায়। শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। মানসিক অশান্তি থাকলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানসিক অসুস্থতা মানুষের জীবনে অনেক ব্যর্থতা ও দুর্গতির সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক অসুস্থতার কারণে শিশুমনে মানসিক বিকৃতির সূত্রপাত হয়, মাতা-পিতা বা অভিভাবক এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে শিশু প্রকৃতির যে কোনো অস্বাভাবিকতা দূর করতে যত্নবান হবেন।মানসিক অবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্যবিধি মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের বিষয়। এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদির মধ্যে রয়েছে মনস্তত্ত্ব, মানসিক ব্যাধি, ভেষজ, প্রাণিবিদ্যা, সমাজ বিস্তার। শিশু মনস্তত্ত্ব ও শিক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিভিন্ন রকমের মানসিক বিকৃতি তথা অস্থিরতা, মানসিক বিকৃতি ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধের জন্য চেষ্টা করে। মানসিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে মানসিক ব্যাধি, বুদ্ধিবৃত্তির স্বল্পতা, স্নায়বিক মনোবিকার, অপরাধ, প্রবণতা ইত্যাদি প্রধান। মানসিক অস্থিরতা দূরীকরণের তথা প্রতিরোধের জন্য সুশিক্ষা, শিশুর স্বাস্থ্য সম্মত লালনপালন, পরিচর্যা, উন্নত পারিবারিক পরিবেশ, মাতা-পিতা, অভিভাবকের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদির প্রয়োজন। মানসিক আচরণের এই জটিল গতি প্রকৃতি ও অস্থিরতা দূরীকরণে ধৈর্যশীল আচরণ, সুশিক্ষা, শিশুবান্ধব পরিবেশ, পুষ্টি, পরিচর্যা, আনন্দময় জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুর সরবরাহ ব্যবস্থাপনা থাকা প্রয়োজন। এর ফলে আগামীতে এক সুস্থ জাতি গড়ে উঠবে যা সামগ্রিকভাবে সকলের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
কাজ-১ : ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যে পরস্পরবিরোধী আচরণ দেখতে পাওয়া যায় তা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা কর এবং যুক্তি প্রদর্শন কর। কাজ-২ : মানসিক অস্থিরতার ক্ষতিকারক দিক কী এবং মানসিক অস্থিরতা দূরীকরণের উপায় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা দলে বিভক্ত হয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থাপন কর। |
আরও দেখুন...